ভুট্টার রোগ ও তার প্রতিকার
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা
ভুট্টার চারা অবস্থায় কাটুই পোকার আক্রমণ হলে হাত দিয়ে তা মেরে ফেলতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা
ভুট্টার বীজ পচা এবং চারা গাছের রোগ দমনঃ
বীজ পচা এবং চারা নষ্ট হওয়ার কারণে সাধারণত ক্ষেতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়। নানা প্রকার বীজ ও মাটি বাহিত ছত্রাক যেমন পিথিয়াম, রাইজোকটনিয়া, ফিউজেরিয়াম, পেনিসিলিয়াম ইত্যাদি বীজ বপন, চারা ঝলসানো, রোগ ও শিকড় পচা রোগ ঘটিয়ে থাকে। জমিতে রসের পরিমাণ বেশি হলে এবং মাটির তাপমাত্রা কম থাকলে বপনকৃত বীজের চারা বড় হতে অনেক সময় লাগে। ফলে এ সময়ে ছত্রকের আক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়।
প্রতিকারঃ
১. সুস্থ্য, সবল ও ক্ষতমুক্ত বীজ এবং ভুট্টার বীজ পচা রোগ প্রতিরোধী বর্ণালী ও মোহর জাত ব্যবহার করতে হবে।
২. উত্তমরূপে জমি তৈরি করে পরিমিত রস ও তাপমাত্রায় (১৩°সে এর বেশি) বপন করতে হবে।
৩. থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) প্রতি কেজি বীজে ২.৫–৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করলে ভুট্টার বীজ পচা রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়।
ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ দমনঃ
হেলমিনথোসপরিয়াম টারসিকাম ও হেলমিনথোসপরিয়াম মেইডিস নামক ছত্রাকদ্বয় এ রোগ সৃষ্টি করে। প্রথম ছত্রাকটি দ্বারা আমাদের দেশে ভুট্টার পাতা ঝলসানো রোগ বেশি হতে দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়, যা পরবর্তীতে গাছের উপরের অংশে ছড়িয়ে পড়ে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়। এ রোগের জীবাণু আক্রান্ত অংশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে এবং বাতাসের সাহায্যে সহজেই ছড়াতে পারে। বাতাসের আদ্রতা বেশি হলে এবং ১৮–২৭°সে তাপমাত্রায় এ রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়।
প্রতিকারঃ
১. রোগ প্রতিরোধী জাতের (মোহর) চাষ করতে হবে।
২. আক্রান্ত ফসলে টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১৫ দিন পর পর ২–৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. ভুট্টা উঠানোর পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ দমনঃ
এই রোগ ভুট্টার ফলন, বীজের গুণাগুণ ও খাদ্যমান কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক যেমন ডিপ্লোডিয়া মেডিস, ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি প্রভৃতি এ রোগ ঘটায়। আক্রান্ত মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়, দানা পুষ্ট হয় না, কুঁচকে যায় বা ফেটে যায়। অনেক সময় মোচায় ছত্রাকের উপস্থিতি খালি চোখেই দেখা যায়। ভুট্টা গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হলে এ রোগের আক্রমণ বাড়ে। পোকা বা পাখির আক্রমণে বা কান্ড পচা রোগে গাছ পড়ে গেলে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।
প্রতিকারঃ
১. একই জমিতে বারবার ভুট্টা চাষ করা ঠিক নয়।
২. জমিতে পোকা ও পাখির আক্রমণ রোধ করতে হবে।
৩. ভুট্টা পেকে গেলে দ্রুত কেটে ফেলতে হবে।
৪. কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ভুট্টার কান্ড পচা রোগ দমনঃ
ডিপ্লোডিয়া মেডিস ও ফিউজেরিয়াম মনিলিফরমি প্রজাতির ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে গাছের কান্ড পচে যায় এবং গাছ মাটিতে ভেঙে পড়ে। আমাদের দেশে খরিফ মৌসুমে এ রোগ বেশি দেখা যায়। জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি এবং পটাশ কম থাকলে ছত্রাকজনিত কান্ড পচা রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
প্রতিকারঃ
১. ছত্রাকনাশক ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে বীজ শোধন করে লাগাতে হবে।
২. সুষম হারে সার ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
৩. ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৪. শিকড় ও কান্ড আক্রমণকারী পোকা-মাকড় দমন করতে হবে।
৫. আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ২–৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলুদ হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫–৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।
সাধারণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
স্বাস্থ্যকর বীজ: সবসময় প্রত্যয়িত সুস্থ ও সবল বীজ ব্যবহার করুন।
পরিচ্ছন্নতা: আক্রান্ত গাছের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলা বা জমি থেকে সরিয়ে ফেলা জরুরি।
সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা: জৈবিক ও রাসায়নিক পদ্ধতি একসাথে ব্যবহার করে রোগ দমন করুন।
ফসলের আবর্তন: একই জমিতে বারবার ভুট্টা চাষ না করে ফসল চক্র পরিবর্তন করুন।

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url