আমন ধানের উচ্চ ফলনশীল জাত | ব্রি ধান ৫২| আমন ব্রি ধান ৫২ চাষ পদ্ধতি

আমন ধানের উচ্চ ফলনশীল জাত | ব্রি ধান ৫২| আমন ব্রি ধান ৫২ চাষ পদ্ধতি

📌 জাত পরিচিতি

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত একটি আধুনিক ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাত হলো ব্রি ধান৫২। এটি মূলত আউশ মৌসুমে চাষের জন্য উপযোগী। এই জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো – পানির নিচে ডুবে গেলেও দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে সক্ষম হওয়া। সাধারণ ধানগাছ পানির নিচে গেলে কয়েক দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু ব্রি ধান৫২ সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থেকেও বেঁচে থাকতে পারে।

এই কারণে একে বলা হয় বন্যা সহনশীল জাত (Submergence Tolerant Variety)। বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ জাতটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১০ সালে অনুমোদিত হয়। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে নিয়মিত বন্যার প্রভাব পড়ে, সেসব এলাকায় কৃষকদের জন্য এটি আশীর্বাদস্বরূপ।

🌟 জাতের বৈশিষ্ট্য

✅ আধুনিক বন্যা সহনশীল জাত।

✅ শীষে গড়ে থাকে প্রায় ১০২টি ধান।

✅ গড় ফলন: ৪.৫ – ৫.৫ টন/হেক্টর।

✅ প্রতিকূল অবস্থায় (বন্যা পরবর্তী) ফলন: ৩.৫ – ৪.৫ টন/হেক্টর।

✅ গাছের গড় উচ্চতা: ১১৬ সেমি।

✅ দানার আকৃতি: মাঝারীচালা।

📌 বিশেষ প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশে আউশ মৌসুমে প্রায়ই অতিবৃষ্টি বা আকস্মিক বন্যায় ফসল ডুবে যায়। অনেক সময় একটানা ১–২ সপ্তাহ পর্যন্ত জমি পানির নিচে থাকে। সাধারণ ধানের জাতগুলো এতে নষ্ট হয়ে যায় এবং কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

কিন্তু ব্রি ধান৫২ চাষ করলে এ সমস্যার সমাধান হয়। জমি পানির নিচে ১২–১৪ দিন পর্যন্ত ডুবে গেলেও গাছ মরে না, বরং পুনরায় বেড়ে উঠে এবং যথেষ্ট ফলন দেয়। এজন্য বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী।

🌾 জীবনকাল

স্বাভাবিক অবস্থায় জীবনকাল: ১৪০–১৪৫ দিন।

যদি ১৪ দিন পানির নিচে থাকে: ১৫৫–১৬০ দিন।

📊 ফলন

অনুকূল পরিবেশে গড় ফলন: ৪.৫ – ৫.৫ টন/হেক্টর।

প্রতিকূল পরিবেশে (বন্যা পরবর্তী) গড় ফলন: ৩.৫ – ৪.৫ টন/হেক্টর।

সর্বোচ্চ ফলন: ৫.৫ – ৬.০ টন/হেক্টর

📌 চাষাবাদ পদ্ধতি

১. বীজতলা প্রস্তুতকরণ

সময়: ১–১৫ এপ্রিল (১৫–৩০ চৈত্র) → উঁচু জমি।

সময়: ১৫–৩০ এপ্রিল (১–১৫ বৈশাখ) → অন্যান্য জমি।

২. চারা তৈরি

চারা বয়স: ৩০–৩৫ দিন

৩. চারা রোপণ

সময়: ১৫–২০ মে (১৫ জ্যৈষ্ঠ–১৫ আষাঢ়)।

৪. রোপণ দূরত্ব

প্রতি গাছে দূরত্ব: ২৫ × ১৫ সেমি।

৫. সার ব্যবস্থাপনা (প্রতি হেক্টরে)

ইউরিয়া: ১৪৫ কেজি

টিএসপি: ৮০ কেজি

এমওপি: ৫০ কেজি

জিপসাম: ২৫ কেজ

দস্তা সালফেট: ৫ কেজি

👉 ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।

প্রথম কিস্তি: চারা রোপণের ২০–২৫ দিন পর।

দ্বিতীয় কিস্তি: চারা রোপণের ৫০ দিন পরতৃতীয় কিস্তি: ক্ষেতের অবস্থার উপর নির্ভর করে।

👉 অন্যান্য সার রোপণের আগে জমির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

৬. আগাছা নিয়ন্ত্রণ

প্রয়োজনে আগাছানাশক ব্যবহার করতে হবে অথবা হাতে নিড়ানি দিতে হবে।

৭. রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ

পাতা ঝলসানো, ব্লাস্ট ইত্যাদি রোগ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে

৮. পোকামাকড় দমন

মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

🌾 ব্রি ধান ৫২ দাম 

ব্রি ধান ৫২ একটি উচ্চফলনশীল ও লবণাক্ততা সহনশীল আমন ধানের জাত, যা বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী। এ জাতের চাল লম্বা, চিকন ও হালকা সুগন্ধযুক্ত হয়ে থাকে, ফলে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের কাছেই জনপ্রিয়।

💰 মূল্য সম্পর্কে ধারণা

প্রতি কেজি: সাধারণত ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে।

২ কেজি প্যাকেট: ২২০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

দাম বিক্রেতা, এলাকা, মৌসুম এবং প্যাকেজিং অনুযায়ী কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।

🛒 কোথায় পাওয়া যায়

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম:

বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট

ফেসবুক মার্কেটপ্লেস ও কৃষি ভিত্তিক পেজ

অফলাইন/দোকান:

স্থানীয় কৃষি ইনপুট বিক্রেতা (বীজ, সার, কীটনাশক দোকান)

জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিসের অনুমোদিত ডিলার

✅ কেন ব্রি ধান ৫২ বেছে নেবেন?

  • লবণাক্ততা সহনশীল, তাই উপকূলীয় অঞ্চলে ভালো ফলন দেয়।
  • পানির নিচে ডুবে গেলেও গাছ টিকে থাকতে পারে।
  • রোগবালাই তুলনামূলক কম হয়।
  • চাল লম্বা, চিকন এবং সুস্বাদু।

📌 বিশেষ নির্দেশনা

ব্রি ধান৫২ বিশেষ করে বন্যাপ্রবণ এলাকায় চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী

যেসব অঞ্চলে প্রায়ই হঠাৎ বন্যায় ফসল নষ্ট হয়, সেখানে এ জাত চাষ করলে কৃষকরা নিশ্চিতভাবে লাভবান হবেন।

এই জাতটি বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি নিরাপদ বিকল্প ও আধুনিক সমাধান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url